নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য-পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মাহাত্ম্য

আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য  সম্পর্কে জেনে রাখা লাগবে। একজন মুসলিমের ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম ও প্রধান কাজ হল নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। নামাজ শরীয়তের আবশ্যিক ইবাদত এবং দিনের মূল ভিত্তি।মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, 

নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্যআর তোমরা নামাজ কায়েম কর যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো(সূরা বাকারা আয়াতঃ৪৩)। পবিত্র কোরআন মাজিদে অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এভাবে নামাজ কায়েমের নির্দেশ করেছেন। তাই আমাদের জানতে হবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্র-নিচের অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

চলুন আমরা জেনে নেই উল্লেখ্যভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ-
ফজর= সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফজরের নামাজ।আপনি যতই নামিদামি ক্রিম কিংবা ফেসিয়াল প্যাক ব্যবহার করেন না কেন ফজরের সালাত আদায় না করলে চেহারায় উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে না।

যোহর= যোহরের নামাজ আমাদের রিজিক বয়ে আনে ও রিজিক দান করে।আপনি যতই কঠোর পরিশ্রম করুন না কেন নিয়মিত জোহরের সালাত আদায় না করলে রুজি রোজগার বরকত আসবেনা।

আসর= আসরের নামাজ আমাদের শারীরিক সুস্থতা দান করে।আপনি যতই পুষ্টিকর খাবার খান না কেন নিয়মিত আসরের সালাত আদায় না করলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে না।

মাগরিব= মাগরিবের নামাজ আমাদের চিন্তা মুক্ত রাখে।আপনি নিয়মিত মাগরিবের সালাত আদায় না করলে আপনার শান্তি কখনোই কাজে আসবে না।

এশা= এশার নামাজ এনে দেয় শান্তির ঘুম।আপনি যতই নরম কোমল বিছানায় ঘুমান না কেন এশার সালাত আদায় না করলে আপনার ঘুম আরামদায়ক হবে না।

নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আবু হুমাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি নদী থাকে এবং সেই নদীতে একজন যদি প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে তবে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে?এর জবাবে সাহাবীরা বললেন না। তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে না।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত হলো ঠিক এমন।(বুখারীঃ৪৯৭)। আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সবার আগে বান্দার কাছে তার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।যদি নামাজের হিসাব তার ভালো হয় তাহলে সব হিসাবে ভালো হবে আর যদি নামাজের হিসাব খারাপ হয় তবে তার বরবাদ হবে(তারবাণী আওসাত)।আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির নামাজের সংরক্ষণ করবে অর্থাৎ যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে 
কিয়ামতের দিন তার জন্য নূর,দলিল ও মুক্তির উপায় হবে।যে নামাজের সংরক্ষণ করবে না, তা তার জন্য নূ্‌র, দলিল ও মুক্তির উপায় হবে না।তার হাশর হবে ফেরাউন কারণ ও উবাই ইবনে খালেফের সঙ্গে(মুসনাদে আহমাদ)।অন্যত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুমিন মুসলমান ওজুর জন্য মুখমণ্ডল ধৌত করলে পানির শেষ ফোটার সঙ্গে চোখের গুনা বের হয়ে যায়।দুই হাত ধৌত করিলে পানি শেষ ফোটার সঙ্গে হাতের কোন বের হয়ে যায়।

দুই পা ধৌত করলে পা দ্বারা কৃতগণার পানির শেষ ফোটার সঙ্গে বের হয়ে যায়(মুসলিম)।নামাজ বান্দাকে আল্লাহ সবচেয়ে নিকটবর্তী করে দেয়।হযরত আবু হুমায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছে, বান্দা সেজদার সময় তার মহান প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকে।একইভাবে নামাজের প্রতি অবহেলা আমাদের মন আল্লাহর থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেয়।নামাজের প্রশ্নে উত্তীর্ণ হলে আখিরাতের সব মঞ্জিলে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব হবে।

সালাতের তাৎপর্য

ঈমানের পর ইসলামের দ্বিতীয় ভিত্তি বা রুকন হলো সালাত।আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দিয়েছেন।মনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় ফরজ ইবাদত হলো সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের সালাতকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ের সালাত আদায় করা মুসলিমদের উপর ফরজ(সূরা নিসা আয়াতঃ১০৩)।

কুরআন মসজিদে প্রায় ৮২ স্থানে আল্লাহ তায়ালা সারা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনি আপনার পরিবারের লোকদের সালাত আদায়ের নির্দেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন(সূরা তহা আয়াতঃ১৩২)।সালাতের ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করব।নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায়ের সবচেয়ে সচেষ্ট হবো।মহান আল্লাহর সফল মুমিন ও জান্নাতুল ফেরদাউসের বাসিন্দাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন, 

আর যারা নিজেদের সালাতের ব্যাপারে যত্নবান থাকে(সূরা আল মুমিনুন আয়াতঃ৯)।ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত আদায় না করা মহা অপরাধ ও বড় গুনাহ।আন্তরিক সদিচ্ছা সত্ত্বেও অনাচ্ছা কৃত ভুলে যাওয়া কিংবা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে শালা ছুটে গেলে স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাতের কাজা আদায় করে নিতে হবে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘুমের কারণে যার সালাত ছুটে গেছে সে যেন জাগ্রত হয় সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায় করে নেয়।
সালাত বা নামাজ শব্দটির একটি অর্থ হলো সংযোগ। সালাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাথে নিজেদের সম্পর্ক স্থাপন করি।নানা কারণে মাঝে মাঝে আমরা অসহায় অনুভব করি এবং নিজেকে নিরুপায় ও একাকী মনে করার কোন কারণ নেই মহান আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাদের পাশে আছেন।যে কোন সময় আমরা সালাতে দাঁড়িয়ে তার সামনে মাথা নত করে বুকের ভেতরে জমে থাকা দুঃখ কষ্ট বেদনা হতাশা সব উজাড় করে দিতে পারি এবং তিনি অবশ্যই তা শুনবেন।

তিনি সব কিছুই শুনেন ও দেখেন।আমরাই বরং তার সাথে সংযোগ স্থাপন করি না।আল্লাহর নিকট বান্দার আনুগত্য অভিনয় প্রকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে সালাত।সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নৈকট্য লাভ করে।সালাত হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তির অন্তরের প্রশান্তি এবং তার সাহায্যকারী। সালাদ বিপদে আপদে আত্মাকে শক্তিশালী করে তোলে।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো(সূরা আল বাকারা আয়াতঃ১৫০)। তাই আমরা সবাই নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে বুঝে ঈমানের সহিত এবাদত করব।

নামাজের উপকারিতা

সালাত আল্লাহর বিধান।এই বিধানটি মানুষের কল্যাণের জন্য দেওয়া হয়েছে।সালাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন উপকার পেতে পারে।যেমনঃ
নামাজের উপকারিতা
শারীরিক উপকারিতাঃ সালাত এমন একটি জিনিস যার মাধ্যমে শরীরচর্চার অধিকাংশ উপকারিতায় পাওয়া যায়।যথাযথভাবে সালাতের মাধ্যমে ফুসফুস মস্তিষ্ক মেরুদন্ড মাংস গ্রন্থি আরো ইত্যাদি অঙ্গের রোগের উপকার পাওয়া যায়।স্নায়বিক দুর্বলতা ও জোড়ার ব্যাথা সারানোর জন্য চিকিৎসকরা সালাত আদায়ের পরামর্শ দেন।এ কথা সত্য যে, শালা দেশ সিজদার সময় মস্তিষ্কতমন্ত্রী চোখ ও মাথা সহ অন্যান্য অঙ্গে তো রক্ত প্রবাহ পরিমিত পর্যায়ে থাকে। 
ফলে চোখের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং মঃস্তিষ্ক প্রখর হয়।প্রতিদিনের পাঁচ ৫ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য মেনে সালাত আদায় করলে আমাদের শরীরকে সচল ও কার্যকর রাখার নিশ্চিত করবে। অবশ্যও কর্ম বিমুখতা দূর হয়।তবে সালাতের মূল উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি আত্মনিবেদন।

মানসিক উপকারিতাঃ বর্তমানে মানুষের অশান্তির মূল কারণ হলো মানসিক অস্থিরতা।এই অস্থিরতা দূর করনের জন্য সারা বিশ্বে গবেষণা হচ্ছে।স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধ্যানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।এ ছাড়া মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন পেরেশানিতে ভুগতেন তখন হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে বলতেন সালাতের ব্যবস্থা করো আযান দিয়ে আমাকে শান্তি দাও। সালাত আদায়ের মাধ্যমে মন উৎফুল্ল।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপকারিতাঃমসজিদ হলো মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র ঘর।যেখানে দৈনন্দিন পাঁচবার সম্মিলিতভাবে সালাত আদায় করা হয়।সেখানে ধনী গরিব কোন ভেদাভেদ থাকে না।সেখানে সবাই পদমর্যাদা ভুলে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়।একে অপরের খোঁজখবর নিয়ে সুখে-দুখে পাশে দাঁড়ায়।হলে মুসলিম সমাজের বন্ধন সুদৃঢ় হয়।আর নিয়মিত সালাত আদায় করলে সমাজ হতে অপসংস্কৃতি দূর হয়।

নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য মাহাত্ম্য

ইসলাম আমাদের দিন ও জীবন ব্যবস্থা। আর এ দিনের ভিত্তি হল সালাত।নামাজ সকল ইবাদতের প্রদান। মুমিনের জন্য সালাত মিরাজ স্বরূপ।বস্তু সালাতের মাহাত্ম্য ও উপকারিতা অশেষ।সালাতের মাধ্যমে অগণিত কল্যাণ লাভ করা যায়।নামাজে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের মহা সফলতা।আল কুরআনে বিনয় ও নম্রতার সাথে সালাত আদায়কারী মুমিনদের সফলকাম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে(সূরা আল মুমিন আয়াতঃ১-২)।

আবার অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে যে পবিত্রতা অর্জন করে তার রবের নাম স্মরণ করে ও নামাজ কায়েম করে।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক স্যার/ম্যাম, আজকের আলোচনা সম্পূর্ণ বিষয় ছিল নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে। আপনারা আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও তার উপকার গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।আল্লাহ আমাদের সবাইকে যেন নামাজের গুরুত্ব বুঝাতে তৌফিক দান করেন।আর এর সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত আদায় করার তৌফিক দান করেন। নামাজের সকল গুরুত্ব তাৎপর্য আরেকজনকে জানিয়ে দিতে আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url