আনারস চাষ পদ্ধতি ও আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আনারস গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী একটি ফল। আমাদের সবার কাছে একটি সুস্বাদু ফল। এর ইংরেজি নাম pineapple এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Anannas comosus। এই ফলের আদি জন্মস্থল দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশ। এই রসালো ফলটিতে অনেক পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।
আনারস চাষ পদ্ধতি ও আনারসের উপকারিতা
আনারস আমাদের অনেকের কাছে প্রিয়,আবার আমরা অনেকেই এটা খেতে চাই না। তবে আপনি এটি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আপনার আনারস খাওয়ার ইচ্ছা একবার হলেও হবে। আনারসের ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে যা আমাদের হজম শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে।তাই জেনে নেওয়া যাক আনারস চাষ পদ্ধতি ও আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ নিচের যে অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন

আনারস চাষ পদ্ধতি 

আনারস আমাদের বাংলাদেশের একটি পুষ্টিকর ফল। আনারসের আকর্ষণীয় সুগন্ধ ও অম্লমধুর জন্য এই ফল আমাদের অনেকের কাছে সমাদৃত। এর অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে কবি এঁকে "স্বর্ণকুমারী" বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই বলাই যায় যে,আম যদি ফলের রাজা হয় তাহলে আনারস হলো ফলের রানী। গবেষকদের ধারণা মতে আনারসের উৎপত্তিস্থল হলো ব্রাজিল। এটি বিশ্বের ভিটামিন ও পুষ্টির সমৃদ্ধ সেরা অন্যতম ফল। পুরো পৃথিবীতে প্রায় ৮০-৯০ জাতের আনারস চাষ হয়।

জমি ও মাটি তৈরি= উঁচু জমি ও পানি দাঁড়ায় না। দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি আনারস চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আনারস চাষের জন্য মাটির ঝুরঝুরে করে মই দিয়ে জমির সমতল করতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি কোন স্থানে জমে থাকতে না পারে। জমি থেকে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে এক বেড থেকে অন্য বেডের মধ্যে দূরত্ব হবে ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার।পাহাড়ের ঢাল আনারস আবাদের জন্য বেশ উপযোগী।
পাহাড়ের ঢালে আনারস চাষ করার জন্য কোনক্রমেই জমি চাষ দিয়ে বা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটি আলগা করা উচিত নয়। এতে করে ভূমিক্ষয় এর মাধ্যমে উপর মাটি ধুয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শুধুমাত্র পাহাড়ের জঙ্গল বা আগাছা মাটির স্তরে কেটে পরিষ্কার করে জমি চারা রোপনের উপযোগী করে তুলতে হবে। উল্লেখিত নিয়ম গুলো মেনে আমাদের জমি নির্বাচন করতে হবে। এতে করে আনারসের ফলন খুব ভালো পরিমাণে পাওয়া যাবে।

আনারসের জাত= আঠারোশের কয়েকটি জাত রয়েছে। পুরো বিশ্বে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ রকম জাত রয়েছে। এর মধ্যে হানি কুইন একটি। হানি কুইন ডল্ডুপি হিসেবেও পরিচিত। চোখ সূচালো ও উন্নত এটি গড়ে ওজন প্রায় ১কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতা কাটাযুক্ত ও পাটল বর্ণের হানিকুইন বেশ মিষ্টি আনারস। বলা যায় যে প্রায় মধুর মতই মিষ্টি। পাকা আনারসের শাঁস হয় হলুদ রঙের চোখ-সুচলো ও উন্নত। আর সবচাইতে বড় আকারের জাত হচ্ছে, জায়ান্টকিউ।

এক্ষেত্রে বলা যায় নামের সাথে মিল রেখেই এর আকার ও বড় আকৃতির। পাকা অবস্থায়ও আনারস সবুজাব ভাব,শাঁস হালকা হলুদ বর্ণের। চোখ প্রশস্ত ও চ্যাপ্টা। এই জাতের গাছের পাতা সবুজ ও প্রায় কাটাবিহীন। এর ওজন গড়ে প্রায় ২ কেজি ওজন।ক্যালেন্ডূলা হলো আনারসের আরেকটি জাত। মাঝারি আকারের এই জাতের ফলটি ভালই মিষ্টি,এর ওজন প্রায় ১ কেজি থে্কে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। আনারসের আরও একটি উল্লেখযোগ্য জাত হচ্ছে ঘোড়াশাল।

এই জাতের আনারস টি যখন পাকে আনারস লালচে এবং ঘিয়ে সাদা হয়। চোখ প্রশস্ত ও পাতা কাঁটা বিশিষ্ট চওড়া ও ঢেউ খেলানো হয়ে থাকে। এই জাতের আনারসের ওজন প্রায় গড়ে ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এই জাতের আনারস টিও বেশ মিষ্টি। এগুলো ছাড়াও দেশীয় হয়তো আরো অনেক জাত থাকতে পারে সেগুলো বাড়ির আয়নার আশেপাশে জন্মে। তবে উল্লেখিত জাত গুলো হল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য উপযোগী। 

বংশবিস্তার= সাধারণত স্বাভাবিক অবস্থায় আনারসের বীজ হয় না। তাই বিভিন্ন ধরনের চারার মাধ্যমে আনারসের বংশবিস্তার হয়। সাধারণত পার্শ্ব চারা বোঁটার চারা, মুকুট ছাড়া ও গুড়ি চারা দিয়ে আনারসের বংশবিস্তার হয়। এর মধ্যে পার্শ্ব চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য সবচাইতে বেশি ভালো। আনারসের বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা উৎপন্ন হয়। সব ধরনের চারা ব্যবহার করা যায় চাষের জন্য। পাতার কক্ষ থে্কে, মাটির কাছের পাতার কক্ষ থেকে,ফলে বোঁটার পাশ থেকে,
অথবা মাথার মুকুট বা পুরনো গাছের গোড়া থেকে চারা পাওয়া যায়। তবে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলে থাকে, পাতার কক্ষ থেকে পাওয়া চারা বেশি ভালো। আনারস গাছের সাধারণত বিভিন্ন ধরনের চারা উৎপন্ন হয়। পার্শ্ব চারা বোঁটার চারা গোড়ার চারা বা  ট্যাম্প সব ধরনের যারাই রোপন করা যায় তবে পার্শ্ব চারা ও গোড়ার চারাই উত্তম আনারস আবাদ করার জন্য। তাহলে আমরা যারা জানতাম না তারা এখন জেনে গেলাম কিভাবে আনারসের বংশবিস্তার বা চারা উৎপন্ন হয়।

আনারসের চারা রোপণ ও সার ব্যবস্থাপনা

আমরা সবাই জানি আনারস একটি মৌসুমী ফল। এই ফলের গুণগত মান সম্পন্ন ভালো ফলন পেতে চাইলে আনারস চাষ এর জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। জমি নির্বাচনের পর মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরন অনুযায়ী পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে। আপনি যদি জৈব সার ব্যবহার করেন তাহলে মাটির গুনাগুন ও পরিবেশ দুটোই ভালো থাকবে। আপনারা চাইলে বাড়িতে থাকা গবাদি পশু পাখির গোবর সংগ্রহ করে জমিতে দেওয়া যাবে।

আপনি যদি আনারসের ভালো ফলন পেতে চান তাহলে জমিতে আবর্জনা প্রসার ব্যবহার করতে পারেন। তারা যারা প্রত্যাশা তৈরি করতে জানেন না তারা, মাটি খুঁড়ে একটি গর্ত করে সেখানে গাছের ঝরে যাওয়া পাতাগুলো পুঁতে রেখে পচনশীল করে স্যার তৈরি করে নিবেন। আর যারা জানেন তাদের তো কোন সমস্যা নাই তারা মাটি নির্বাচন করে মাটির পুষ্টি ধরে রাখা যায় এবং উর্বর থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন তাহলে ভালো পরিমাণে ফলন পাবেন।

আমরা অনেকেই জানিনা কোন মাসে আনারস চারা লাগালে বেশি ভালো হয়। মূলত মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাস আনারস চারা লাগানোর জন্য উপযুক্ত একটি সময়। তাছাড়া আপনার যদি সেচের সুবিধা থাকে তাহলে মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসেও আপনি চারা লাগাতে পারবেন। ১ মিটার প্রশস্ত বেডে দুই সারিতে চারা রোপণ করতে হয়। ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাইনে ৩০-40 সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা লাগাতে হয়।
যদি যারা বেশি লম্বা হয় তাহলে ৩০ সেন্টিমিটার পরিমাণ রেখে আগার পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে। পাহাড়ের ঢালে আনারস চাষ এর জন্য কোন্টুর পদ্ধতি বরাবর ঢালের বিপরীতে আড়াআড়িভাবে জোড়া সারি করে চারা রোপন করতে হবে।মোটেও ঢাল বরাবর সারিতে চারা রোপন করা উচিত হবে না। এতে ভূমিক্ষয় বেড়ে যায়। পাহাড়ের ঢালে জোড়া সারিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার ও চারা থেকে চারা দূরত্ব থেকে ২৫ সেন্টিমিটার করতে হবে।

এতে প্রতি হেক্টরে প্রতি প্রায় ৫০ হাজার বা কানিপ্রতি(৪০ শতাংশ) জমিতে ৮০০০ চারা প্রয়োজন হবে। এরপর চারা গুলো নির্ধারিত স্থানে রোপন করার পর গোড়া ভালোভাবে চেপে দিতে হবে। যদিও এক্ষেত্রে পাহাড়ি এলাকাতে দূরত্ব ঠিক সঠিকভাবে মানে না। আপনারা চাইলে আনারসের সাথে আনারসের সাথী ফসল হিসেবে অনায়াসে আদা, সয়াবিন, সরিষা,কালাই,কচু ইত্যাদির সাথী ফসল হিসেবে চাষ করতে পারবেন। আশা করি সম্পূর্ণ বিষয়টি ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।


আনারসে সার প্রয়োগ ও সার ব্যবস্থাপনা

আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে, শুধু গাছ লাগিয়ে দিলেই কাজ শেষ নয় বরং গাছ লাগানোর পর কাজ আরো বেশি হয়। গাছের প্রতি যত্ন নিতে হয় গাছের পুষ্টি উপাদান ঠিক রাখার জন্য ফলন ভালোর জন্য সার প্রয়োগ করতে হয় এসব নানান বিষয়গুলো আমাদের করতে হয়। যে কোন গাছের ক্ষেত্রে। তাই আনারসের ক্ষেত্রেও একই আমাদের ঠিকমতো যত্নবান হতে হবে না হলে ঠিকমতো ভালো ফলন পাওয়া যাবে না।সার ব্যবস্থাপনা ও সার প্রয়োগঃ-

  • আনারসের গাছ প্রতি পচা গোবর সার ৩২০ গ্রাম
  • ইউরিয়া ৩৫ গ্রাম
  • পিএসপি ১৫ গ্রাম 
  • এমওপি ৩৫ গ্রাম 
  • জিপসাম ১৫ গ্রাম
  • ইউরিয়া ও পটাশার চারা রোপনের তিন থেকে চার মাস পর থেকে শুরু করে ৫ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  • অন্যান্য জৈব সার ও পচন সার আনারসের বেড তৈরি সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে
  • জমিতে যে পরিমাণ চারা আছে তা হিসাব করে সেই মতো পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • জিপসাম সার,গোবর সার ভর্তি এসপি স্যার আনারসের বেড তৈরীর সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • এম অভি ও ইউরিয়া সার চারা রোপনের ৪ থেকে৫ দিন পর থেকে শুরু করে ৪ থেকে ৬ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
উপরের উল্লেখিত কাজগুলো অর্থাৎ সার বেডে ছিটিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। আমরা অনেকেই জানি পাহাড়ি অঞ্চলের আনারস একটি উল্লেখযোগ্য ফসল। সেখানে পাহাড়ের ঢালে কোনটুর পদ্ধতিতে সুন্দর লাইন করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আনারস লাগানো হয় এবং দেখতে অপরূপ সুন্দর লাগে। আবার অন্যদিকে সার ব্যবস্থাপনা ও সমতল ভূমির আনারসের চেয়ে অনেক ভিন্নতার।

চারা রোপনের দুই মাস পর গাছপতি ইউরিয়া ও টিএসপি স্যার ১০ গ্রাম করে গাছের গোড়ায় থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে ডিবলিং পদ্ধতিতে সার সুন্দর করে নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মতো প্রয়োগ করতে। আর একইভাবে গাছের বয়স যখন ৭ থেকে ৮ মাসে হবে তখন একবার একইমাত্রায় ষাট প্রয়োগ করতে হবে। আশা করছি আপনারা সবাই জানতেও বুঝতে পেরেছেন কিভাবে আনারসে সার প্রয়োগ করতে হয় ও সার ব্যবস্থাপনা।

সেচ ও নিষ্কাশন= মৌসুমে আনারসের খেতে পেজ দেওয়া খুবই জরুরী এবং প্রয়োজন। বর্ষার মৌসুমের অতিবৃষ্টির সময় গাছের গোড়া যাতে পানি জমে না থাকে সেজন্য নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি যারা বেশি লম্বা হয়ে যায় তাহলে ৩০ সেন্টিমিটার পরিমাণ রেখে আগের পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের আগাছা আনারসের খুবই ক্ষতি করে তাই আনারসের জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন।
আপনারা বছরে অন্তত ২থেকে ৩ বার আগাছা পরিষ্কার করবেন একবার আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল সংগ্রহ করার পর ও আরেকবার অক্টোবর-নভেম্বর মাসে, এতে করে গাছ বেড়ে উঠতে সহায়তা পাবে এবং গাছে রোগবাল আক্রমণ কম হবে ও বেড়ে উঠতে পারবে। গাছ বড় হওয়ার আগে সম্ভব এটি। কিন্তু যখন গাছ জপানো হয়ে যাবে তখন আগাছা পরিষ্কার করা যাবে না আর তখন তেমন পরিষ্কার করার প্রয়োজনও পড়ে না।

আপনারা জমিতে শেষ এবং সার প্রয়োগের পর মালচিং করে নিলে জমি আগাছা মুক্ত থাকবে। মাটিতে যুক্ত হবে এবং এতে করে মাটির উর্বরতা বাড়বে। কোন উদ্ভিদই পানি এবং রোদ ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন অনাবৃষ্টির সময় প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমাণ মতো শেষ দেওয়া এবং অতিবৃষ্টির সময় পান নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন কিভাবে নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিকমতো করে আনারসের ফলন বাড়াবেন।

আনারসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন

আনারস ভিটামিন এ,ভিটামিন বি, ভিটামিন সি বিদ্যমান এর উত্তম উৎস। ১০০ গ্রাম আনারসে খনিজ পদার্থ মিলে০.২ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৩০ কিলোক্যালরি, আমিষ থাকে ০.৯ গ্রাম, শর্করা থাকে৬.২ গ্রাম আরো ক্যালসিয়াম ও ক্যারোটিন ইত্যাদি বিদ্যমান রয়েছে। আনারসের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এঞ্জাইম ব্রোমেলেইন। এতে অনেক পরিমাণে ভিটামিন 'সি' পাওয়া যায়। আনারস ফলে আছে ম্যাঙ্গানিজ খনিজ উপাদান, যা আমাদের দেহের শক্তি বাড়ায়।

আনারসে আরও বিদ্যমান আছে ভিটামিন বি-১, যা আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য কাজ করে। পাশাপাশি আনারস ফল খেলে শরীরে খুব কম ক্যালরি সঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে মোটিয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে না। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারস থেকে মাত্র ৫০ কিলো ক্যালরি পাওয়া যায়।, আবার এতে কোন কোলেস্টেরলও  নাই। আনারস ফলে আছে পেকটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ ডায়েটরি ফাইবার। ভিটামিন "বি" এর নানান উৎপাদন থাকে যেমনঃ-ফলেট, পাইরিওফিন, থায়ামিন, রিবোফ্লোবিনও পাওয়া যায় আনারস থেকে।

আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আমাদের না জানার ক্ষেত্রে আমরা অনেকে আনারস খাই না। কিন্তু আপনি যখন বিশেষ বিশেষ উপকারিতা গুলো জানতে পারবেন তখন আপনি ঠিকই একবার হলেও আনারস খাবেন আনারস দেহের গ্ল্যান্ড ও গ্রন্থ গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গয়টার অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীত হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ। একটি অর্থরাইটিজ উপশমে সাহায্য করে। আসুন আমরা আনারসের আরও উপকারিতা গুলো আমরা জেনে নেইঃ-
  • আনারস আমাদের দেহের বিভিন্ন কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।
  • ক্ষুদ্রান্তের জীবাণু ধ্বংস করে ও পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং সকালে দুর্বলতা করে
  • এটি জরায়ু, স্তন, ফুসফু্স, অন্ত ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
  • আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল
  • আপনাদের শুনতে অনেকটা অবাক লাগলো আনারস কিন্তু আমাদের দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর কারণ আনারসে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে এবং অনেক কম ফ্যাট
  • অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আনারস ম্যাকুলার ড্রিগেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আস্তে আস্তে আমরা অন্ধ হয়ে যাই।
  • আর প্রতিদিন আনারস খাওয়ার ফলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়
  • ত্বকের যত্নে আনারস অনেক কার্যকারী। তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণ দূর করে থাকে আনারস
  • ত্বকে কুঁচকানোর হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে আনারস
  • আনারস আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • বিদ্যমান থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে এবং আমাদের মাড়ি বা যেকোনো সমস্যার সমাধানে আনারস অনেক কার্যকরী।
  • নাক দিয়ে পানি পড়া গলা ব্যথা করা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসাবে কাজ করে থাকে আনারস।
এই থেকে এক কথায় বলা যায় যে আমাদের দেহর পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ ও সরল রাখার জন্য আনারস একটি অতুলনীয় কার্যকারী ফল। তাই আমাদের নিয়মিত পরিমাণ মতো আনারস খাওয়া উচিত।

আনারসের অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সব কিছু জিনিস কিংবা সব ধরনের ফলে উপকারিতা ভালো দিক রয়েছে তেমন অপকারিতা অর্থাৎ সমস্যা খারাপ দিকও রয়েছে। আনারসে থাকা বিদ্যমান উপাদান গুলো আমাদের শরীরের যেমন উপকার তেমন কারো জন্য আমার ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসে। যেমন, অনেকেরই এলার্জি সমস্যা হয় এর ফলে তাদের শরীরে চুলকানি ও করি দেখা দেয় ও বেড়ে যায়। আনারস এসিটিক ফল তাই খালি পেটে খেলে আপনাদের পেট ব্যাথা হতে পারে।

আনারস খাওয়ার কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ-
  • এলার্জির আক্রমণ= খাওয়ার ফলে এলার্জির উপর স্বর্গ হলো ঠোঁট ফুলে যাওয়া ও গলায় সুরসুরি বোধ হওয়া
  • নারীর গর্ভপাতের ঝুঁকি= রস খাওয়ার ফলে গর্ভপাত নারীদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় নারীদের আনারস খেতে বারণ করা হয়। আর আপনি যদি গর্ভাবস্থায় আনারস খেতে চান তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে
  • রক্তের চিঠির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়= অনেক বেশি পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে আর আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহের রক্তের চীনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তাই আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন খেতে পারেন
  • বাতের ব্যাথা হওয়ার ঝুঁকি= যে সকল মানুষের দেহে বাতের ব্যথা আছে কিংবা সন্দেহ করা হচ্ছে বাঁধ হতে পারে তাদের আনারস না খাওয়াটাই উত্তম
  • ঔষধের প্রতিক্রিয়া= আপনি যদি কোন কারনে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টকনভালসেন্ট ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আনারস খেতে ডাক্তারের নিষেধ করে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়
  • কাঁচা আনারসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া= অনেকেই কাঁচা আনারস ব্যবহার করে থাকেন জুস বানিয়ে খাওয়ার জন্য কিন্তু এটি দেহের জন্য ক্ষতিকারক এবং খুব বিষাক্ত 
  • কাঁচা আনারস মুখো গলার জন্য ক্ষতিকারক= আছে অনেক বেশি পরিমাণে এসিডিটি যা আমাদের মুখের ভিতর গলায় শ্লেস্মবা তৈরি করে এবং ফলটি খাওয়ার পর মাঝে মাঝে অনেক পেট ব্যাথা হতে পারে ও বমিও হতে পারে
  • রক্ত তরলীকরণ ওষুধ= করার জন্য যে ওষুধ বানানো হয় তাতে আনারস ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রতিক্রিয়ার বাধা প্রদান করে থাকে
  • দাঁতের জন্য ক্ষতিকর= আনারস আমাদের দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক। যাদের দাঁতে কেভিটিস এবং জিংজাইভেটিভস এর সমস্যা আছে তাদের আনারস না খাওয়াই উত্তম।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক,স্যার/ম্যাম আজকের আলোচনার বিষয় ছিল কিভাবে আনারস চাষ পদ্ধতি আনারসের
উপকারিতা সম্পর্কে। আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম তবে আনারসের  চাষ করবেন আনারসের জমি তৈরি ,সার ব্যবস্থা, সেচ ,জাত এসব নিয়ে আপনাদের সাথে সত্যের উপর আলোচনা করলাম। আশা করছি আপনারা যারা আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা অবশ্যই জানতে পেরেছেন আনারসের সম্পূর্ণ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

আপনারা যারা আনারসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন তাদের জন্য আমরা এর উপর যেসব বিষয়গুলো উপকারিতা সেগুলো এবং যেগুলো আমাদের জন্য অপকারিতা ও যেসব বিষয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে সেগুলো তুলে ধরলাম। আর্টিকেলটি আপনাদের পড়ে ভালো লাগলে আপনাদের বন্ধু কিংবা আত্মীয়স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন যেন তারা উপকৃত হয়। সবাই সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন, আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url