মহরমের রোজা কত তারিখে ২০২৪
প্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো জানতে চাচ্ছেন মহরমের রোজা কত তারিখে? মহরমের ইতিহাস কি এবং মহরম কী?জী,আপনি এসব বিষয় জানার জন্য সঠিক জায়গাতেই এসেছে। আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের এসব সম্পর্কিত সব কিছু বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে দিব।
মূলত মহরম হলো ইসলাম ধর্মাবলীদের একটি উৎসব। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা হিসেবেও আমরা জানি। ইসলামে একটি মাসের নাম হল "মহরম"। মাহরুমের আভিধানিক অর্থ হলো 'হুরমত' যার অর্থ হলো সম্মানের মাস। চলুন দেরি না করে আমরা আজকের এসব বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে জানি।
সূচিপত্র-নিচের যে অংশ পরতে চান ক্লিক করুন
মহরমের ইতিহাস জানুন
আপনি কি কখনো মহরম পালনের পিছনে গভীর সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তৃত হয়েছেন। পুরো বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ তারা পর্যবেক্ষণ করা এই গৌরবময় উপলক্ষটি ইসলামিক নববর্ষের সূচনাকে চিহ্নিত করে থাকেন। ২০২৪ সালে মহরম ৮ই জুলাই সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে। যা মুসলমানদের জন্য প্রতিফলন এবং সরলা একটি সময় সূচনা করে। এমন একটি সময় যা ইতিহাসের গভীরে পঠিত বিশেষ করে কারবালার যুদ্ধে হযরত হুসাইন ইবনে আলীর শাহাদাতের কথা স্মরণ করে।
দিনটি ছিল নবী মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মক্কা থেকে মদিনার পূর্ব হিজরত করার বার্ষিক চিহ্নিত করে। মূলত ৬২২ খ্রিস্টাব্দে নবী ও তার সঙ্গীরা মক্কা ছেড়ে মদিনা দিকে যেতে বাধ্য হন এবং তখন থেকে হিজরী ক্যালেন্ডার শুরু হয়। এই দিনের আগে, নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের বার্তা প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। 622 খ্রিস্টাব্দে সালে মক্কা বিজয়ের পর এটি বিশ্বাস করা হয় যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শহরে ফিরে আসেন।
আরো পড়ুনঃমুলতানি মাটির উপকারিতা ও অপকারিতা
মহররম হলো অন্যান্য ইসলামিক অনুষ্ঠানের মত উদযাপনের পরিবর্তে প্রার্থনা ও শোকের মাস। কোথাও কোন উৎসব দেখা যায় না তবে প্রকৃতপক্ষে এই মাসটি শিয়া মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি এবং হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর পুত্র ইমাম হোসাইন ১০ সালের মহরমের ৬৮০ তারিখে কারবালার যুদ্ধের শহীদ হন। আর এই বিশেষ দিনটি মূলত আশুরার নামে পরিচিত।
মূলত এই মাসের প্রথম ১০ দিন এজন্য শিয়া মুসলমানরা ইমাম হোসেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে।শিয়া মুসলমানরা প্রায় তাদের বুক মারতে থাকে, যা লাথি মা নামে পরিচিত এবং অনেকে তাদের কপাল কেটে ফেলে। আশুরার দিনের সুন্নি মুসলমানরা হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রদ্ধা জানাই এবং আচার অনুষ্ঠানে অংশ নেয় না। আশুরার দিনে মুসলমানদের জিয়ারত আশুরা পড়ার রেওয়াজ রয়েছে। যে বইটিতে কারবালার শহীদদের সম্পর্কে তথ্য রয়েছে।
মূলত হিজরী সনের প্রথম মাস হল মহরম। ইসলামের দৃষ্টিতে মহরম বিশেষ মর্যাদা পূর্ণ ও সম্মানের মাস। অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহত আছে এই মাস ঘিরে। মূলত এই মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বের তাৎপর্যপূর্ণ সেই আশুরার দিন। আমরা একটু আগে আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম সেটি হল এই দিনের সর্বাপেক্ষা আলোড়িত আলোচিত বিষয় হলো কারবালার সেই মর্মান্তিক ভাবে যুদ্ধের শহীদ হয়ে যাওয়া ইতিহাস।
আশুরার এই দিনে ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য স্মরণীয় ঘটনাটির শীর্ষে স্থান পায় হযরত মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি ঘটনা। এই দিনে তিনি অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এই ঘটনার বিবরণে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত করেন, মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে মদিনা ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা পালন করতে দেখেন।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কে জিজ্ঞাসা করিলেন, এই দিনে কি এমন ঘটেছে যে তোমরা এত রোজা পালন করো? তারা উত্তরে বললেন, এই দিনটি অনেক বড় দিন, এই দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ও তার সঙ্গীদের ফিরাউনের হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফিরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রাখতেন হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রাখতেন।
মূলত এর প্রেক্ষাপটে আমরাও এই দিনটিতে আশুরার রোজা পালন করে থাকি এবং রোজা রাখি। ইহুদীদের কাছ থেকে এই জবাব শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের থেকে বেশি যত্নশীল হওয়ার অধিকারী। অতঃপর তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখেন এবং সব মুসলমানদের রোজা রাখার জন্য ও পালন করার জন্য নির্দেশ দেন।
১৪৪ বছর আগে হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার অনুগামীরা মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হতে বাধ্য হন এবং ওই দিনটি ছিল মহরমের প্রথম দিন তাকে মূলত মক্কায় ইসলামের বার্তা প্রচারণা করার জন্য বাধ্য প্রদান করা হয়েছিল। মহরমের ১০তম দিনটি আশুরা হিসেবে পালিত হয়। একই দিনে ইমাম হোসাইনের মৃত্যু শোক পালন করা হয়। হযরত আলী রাঃ পুত্র ৬৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কারবালার যুদ্ধে তিনি প্রান্ত ত্যাগ করে শহীদ হয়েছিলেন।
২০২৪ সালের মহরম কত তারিখে জানুন
আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করে থাকে যে, মহরম ও আশুরা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৌহিত্র হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কারবালার ময়দানে শহীদ হওয়ার জন্য। আপনারা অনেকেই মৃত্যুর দিনকে স্মরণ করে মনকে শোকাবহ করে তুলে মহরমের রোজা রাখেন। অনেকেই আবার হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এবং তার দৌহিত্রদের শাফায়াতের পাওয়ার জন্য এমনটা করে থাকেন।
তবে আমাদের সম্পূর্ণরূপে ভুল ধারণা এই কাজটি। আজকে আপনাদের এই সম্পর্কে আমরা সঠিক হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিব। সেই সাথে আপনারা আরো জানতে পারবেন এই আফরো রোজা কোথ তারিখে রাখবেন ও সঠিক নিয়ম কি কি। হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেরাউন এবং তার শত্রুদের মৃত্যু ভয় দাঁড়িয়ার ভেতর দিয়ে পার হচ্ছিলেন মহান আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দাঁড়িয়ে আর ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে দেন।
এবং সেই রাস্তা দিয়ে মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাথীগনরা পার হয়ে যান নিরাপদে এবং সাথে সাথে ফেরাউন এবং তার সৈন্যদল মাঝপথে গেলেন তখন সেই রাস্তাটিকে পানিতে রুপান্তরিত করে ফেরাউনকে এবং তার সৈন্যদের মৃত্যুবরণ করলেন। মূলত এই ঘটনাটি ঘটেছিল আরবি মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ ১০ মহরম এ। মহান আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্ব রক্ষার্থে এবং মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা কে রক্ষার জন্য আল্লাহ তাআলা এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মহরমের রোজা কত তারিখে ২০২৪ জানুন
আপনার যারা মহররম পালন করেন এবং মহররমের রোজা রাখবেন অথবা এতদিনে এসব জানার পর রাখবেন মনে করছেন তাদের মূলত কি রোজা। রাখতে হবে এই রোজা আপনারা মহরম মাসের ৯ তারিখে ১০ তারিখে রাখতে পারেন অর্থাৎ ১৬জুলাই এবং ১৭জুলাই। আশা করি আপনারা হিসাব করলে মহরমের রোজা কবে হবে সেটা বের করতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গার মসজিদে মহরমের রোজা রাখার জন্য দিন ও তারিখ ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃআখরোট ও মধুর মিশ্রণ খাওয়ার উপকারিতা
তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণ বুঝে গেছেন কোন দুটি তারিখে রোজা রাখতে হবে। আচ্ছা তারপরও আপনাদের সুবিধার্থে আমরা আবারও জানিয়ে দিতে চাই যে, আপনারা যারা দুইটি রোজা রাখবেন তাদের জন্য ১৬ জুলাই এবং ১৭ জুলাই এই দুই দিন মহরমের রোজা রাখতে হয় তাই আপনারা উক্ত তারিখে মহরম এর জন্য ইবাদত বন্দি করবেন এবং পারলে রোজা রাখবেন। যেহেতু আমাদের নবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের নির্দেশ করে গেছেন আমাদের এটা মেনে চলা উচিত।
১০ মহরম কত তারিখ ২০২৪ জানুন
আমরা অনেকেই জানিনা মহরম কি? কি তাই আপনাদের সাথে এতক্ষণ মহররমের সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এখন আপনাদের জানাবো ২০২৪ সালের ১০ই মহরম কত তারিখ। আরবি হিজরী সন ১৪৪৬ শুরু হয়েছিল কিছুদিন আগে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল না রেখে বাংলাদেশে একদিন পরে থেকে প্রতি মাসের ১ তারিখ গণনা শুরু হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের আকাশে তখন চাঁদ দেখা যায়নি। তাই বাংলাদেশে ১৪৪৬ শুরু হয় ৭ জুলাই থেকে।
এই ভিত্তিতে দশ মহরম কত তারিখে পালিত হবে তা আপনারা নিজে হিসাব করতে পারবেন। চলুন তারপরও আপনাদের সুবিধার্থে আমরা জানিয়ে দেই যে,মহরম পালিত হবে জুলাই মাসের ১৭তারিখে। আর এছাড়া যারা ৭ তারিখে মহররমের জন্য রাত জাগবেন তাদের পরবর্তী দিন ছুটি সরকার নিয়মিতভাবে দিয়ে থাকেন। এই হিসেবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ আশুরা পর্যন্ত ছুটি থাকিবে। আশা করছি ২০২৪ সালের ১০ মহরম কত তারিখে জানতে পেরেছেন।
১০ই মহরমের কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা
আমরা যারা আর্টিকেলটি এখন পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণটাই পড়েছে আমরা তারা তখন জানতে পারলাম ১০ই মহরম ইতিহাস কি দশে মহরম কত তারিখে হয় ১০ই মহরম রোজা কিভাবে পালন করতে হয়। কিন্তু আমরা এখনো অনেক জনই জানিনা ১০ই মহরমের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো। তাই চলুন আপনাদের মহরমের কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দেইঃ-
- ১০ই মহরমে আকাশ জমিন পাহাড় পর্বত সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছিল।
- হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল
- হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহা প্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ
- হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নমরুদের তৈরি প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকাণ্ড থেকে মুক্তি লাভ
- দীর্ঘ ১৮ বছর রোগের পর হযরত আইয়ুব আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি দিলাম করেছিলেন
- হযরত সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পৃথিবীর রাজত্ব দান করেছিলেন
- হযরত ইউনুস আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চল্লিশ দিন পর নদীতে মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেছিলেন।
- হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন
- হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পৃথিবীতে আগমন এবং জীবন্ত অবস্থায় আসমানের উত্তোলন হয়েছিল
- হযরত ইদ্রিস আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসমান উত্তোলন করেছিলেন
- হযরত দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিশেষ সম্মান ঘোষিত করেছিলেন
- খায়বার যুদ্ধের বিজয় অর্জন হয়েছিল
- মাদায়েন এবং কাদিশিয়ার যুদ্ধে বিজয় অর্জন হয়েছিল
- হযরত আদম আলাইহিস সাল্লামকে জান্নাতের প্রবেশ করিয়েছিলেন
- হযরত আদম আলাইহিস সালামকে জান্নাত থেকে দুনিয়া প্রেরণ এবং গুনাহ মার্জনার পর তার সঙ্গে "হাওয়া" আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ সাক্ষাৎ লাভ হয়েছিল।
- হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তুফান ও প্লাবন থেকে পরিত্রাণ দান করেছিলেন
- হযরত সোলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হারানোর বাদশাহি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল
- হযরত ইয়াকুব আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কর্তৃক হারানো পুত্র হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ লাভ।
- আমাদের সবার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে মদিনা শরীফে আগমন। হযরত ইমাম হোসেন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এবং তার ৭৭ জন ঘনিষ্ঠ স্বৈরাশ শাসক ইয়াজিদের সৈন্য কর্তৃক কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছিলেন।
মহরম মাসের হাদিস বর্ণিত কিছু তথ্য
মহরম মাসের আশুরা রোজা সম্পর্কিত হাদিস গ্রন্থে অনেক তথ্য দেওয়া আছে। তার মধ্যে থেকেই আপনাদের কিছু তথ্য মহরম মাসের আশুরা সম্পর্কিত বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিব। চলুন দেরি না করে কয়েকটি হাদিস আপনাদের সামনে উপস্থাপন করিঃ-
আরো পড়ুনঃ শরীর ঠিক রাখতে সকালের ব্যায়াম ও নিয়ম
- আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন," রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা মহরম মাসের আশুরার রোজা"।{সুনানে কুবরা-হাদিসঃ৮৪২ ৮১০ ৪২১০}
- আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলিলে্ এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ গুলো সমস্ত মুছে দেয়।{ মুসলিম-হাদিসঃ১১৬২}
- মুসলিম শরীফে হাদিস থেকে বর্ণিত , আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং অন্যদের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করিতেন তখন সাহাবীরা অবাক হয়ে বলিলে্ হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধর্মীরা তো এই দিনটাকে বড়দিন মনে করে।
- এই দিনে তারাও রোজা পালন করেন আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো একই সামজ্জনস্য হবে। তাদের প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তারা যেহেতু এই দিনে একটি রোজা পালন করে, আমরা আগত বছর ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুদিন রোজা পালন করব, ইনশাআল্লাহ{ মুসলিম-হাদিসঃ১১৩৪}
- আর এক বর্ণনায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা এই দিনে অর্থাৎ আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে তোমরা এ ক্ষেত্রে ইহুদীদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রাখবে{মুসনাদে আহমদ- হাদিসঃ২১৫৪}
মহরম মাসের আমল ও তাৎপর্য
আমরা এতক্ষণ মহরম মাসের সম্পর্কে বিস্তারিত সব কিছু জানলাম। এখন আমাদের জানা উচিত মহরম মাসের আসল রোজার ফজিলত তাৎপর্য ও আমল সম্পর্কে। তাই চলুন দেরি না করে আমরা বিষয়গুলো সব বিস্তারিত ভাবে জেনে নেইঃ-
- মহররম এর অর্থ= মহরম শব্দের অর্থ "সম্মানিত"/মূলত প্রাচীন কাল থেকেই এই মাসকে পবিত্র মাস হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
- মহরম মাসের তাৎপর্য= যুদ্ধ-বিদ্বেষ নিষিদ্ধ মাস/আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার মাস/আরবি নববর্ষ উদযাপনের একটি মাস/ইসলামের ইতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর সাথে সম্পর্কিত এই মাস।
- মহরম মাসের আমল= মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখা
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সাথে রোজা পালন করা/বেশি থেকে বেশি নফল নামাজ আদায় করা
- এই মাসের বিশেষ দিনগুলোতে জিকির-আজকারের মাধ্যমে আল্লাহতালা নৈকট্য অর্জন ও দিন যাপন করা
- পুরো দিন তওবা ও ইস্তেগফারের মধ্যে কাটানো গুনাহে মাফের আশায়
- রোজা অবস্থায় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা এতে করে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
- মহররমের বিশেষ দিবস=১ লা মহরমঃ হিজরী নববর্ষ/ ১০ ই মহরমঃ আশুরা দিন
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক স্যার/ম্যাম, আজকের আলোচনার ছিল মহররম মাসের ইতিহাস,মহরমের রোজা কত তারিখে,মহরম মাসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব এবং১০ মহরম কত তারিখে। আশা করি এসব বিষয়গুলো আপনারা সত্যের উপর সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। আজকের আর্টিকেলে মহরম সম্পর্কিত যেসব আলোচনা হয়েছে আপনারা এইসব কাজগুলো মেনে আমল করার চেষ্টা করবেন। মহরম খুবই একটা সম্মানিত গুরুত্বপূর্ণ মাস।মহরম সম্পর্কিত আপনাদের যদি আরো কিছু জানার থাকে অতি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দেবেন আমরা আপনাদের জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ। আমরা যারা মুসলিম ভাইয়েরা আছি তাদের অবশ্যই উচিত মহরম সম্পর্কিত একবার ইতিহাস পড়া এবং মহরমের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো কী ও কবে ও কি কি করতে হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url