হাইব্রিড ঝিঙ্গার চাষ পদ্ধতি-হাইব্রিড ঝিঙ্গার জাত

আমাদের বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি হচ্ছে ঝিঙ্গা। আমাদের দেশের প্রায় সব এলাকাতেই হাইব্রিড ঝিঙ্গা ও দেশী ঝিঙ্গা চাষ করা হয়। আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে ঝিঙ্গা চাষ করেন তাহলে আপনি এই সবজি থেকে ভাল ফলন পেতে পারেন। তাই আজকে আমরা আপনাদের জানাবো হাইব্রিড ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি।

হাইব্রিড ঝিঙ্গার চাষ পদ্ধতি -হাইব্রিড ঝিঙ্গার জাত

বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই বাগান করতে পছন্দ করি। আপনি যদি ঝিঙ্গে সবজি পছন্দ করেন এবং বাগানে রাসায়নিক মুক্ত ঝিঙে চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন পরতে হবে। কারণ এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে বাগান করার কিছু গোপনীয় টিপস দিব যেগুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই একটি পাত্রে হাইব্রিড  ঝিঙে চাষ করতে পারবেন। 

সূচিপত্রঃনিচের যে অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন

হাইব্রিড ঝিঙা চাষ পদ্ধতি

আমরা অনেকেই আছি যারা সবজি চাষ করতে চাই,কিন্তু অনেক কিছু না জানার কারণে সবজি লাগিয়ে ঠিকমতো ফলন পায় না। তাই আমরা আজকে আপনাদের জানাবো হাইব্রিড ঝিঙ্গা চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে। আপনার যদি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই ভালো ফলন পাবেন আশা করা যায়। তাই চলুন আর দেরি আমরা হাইব্রিড ঝিঙ্গা ও বেশি ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানি।

ঝিঙ্গা চাষের জন্য আমাদের সর্বপ্রথম যেটি নির্বাচন করতে হবে তা হল জলবায়ু ও মাটি। দীর্ঘ সময় ব্যাপী উষ্ণ ও আদ্রতা আবহাওয়া এবং প্রচুর সূর্যালোকে থাকে এমন এলাকায় ঝিঙ্গা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উত্তম। সুনিষ্কাশিত উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ মাটিতে ঝিঙ্গার চাষের জন্য অধিক উত্তম। এরপর আপনাকে যা করতে হবে তা হল মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মে মাসের মধ্যে যেকোনো সময় আপনি ঝিঙ্গার বীজ লাগাতে পারেন। তবে হাইব্রিড ঝিঙ্গা সারা বছরই চাষ করা যায়।
বেড তৈরি= ঝিঙ্গা চাষের জন্য বেডের উচ্চতা দরকার ১৮ থেকে ২০ সেন্টিমিটার এবং ১.৪ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামতো করে নিতে হবে। তারপর আপনি এভাবে পরপর ডেট তৈরি করবেন। এরূপ পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে আপনি ৬০ সেন্টিমিটার দেশের সেচ এবং নিষ্কাশন নালা এবং ফসল পরিচর্যা সুবিধার্থে প্রতি দুই পেট পরপর ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত থাকবে। আপনি ডেট তৈরির এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনার ফলন নিশ্চিত ভালো মানের হবে।

মাদা তৈরি ও চারা রোপন= আমরা অনেকেই এই জায়গাতে এসে একটা ভুল করি যে মাদার-ব্যাস  সঠিকমতো না জানার কারণে গভীরতা এবং তলদেশ কেমন হবে না জানার কারণে। তবে চলুন এই সমস্যা আপনাদের ভুগতে হবে না আমরা বিস্তারিত আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি। মাদার ব্যাস ৫২
সেন্টিমিটার, এবং এর গভীরতা ৪৮ এবং তলদেশ বা ৫২সেন্টিমিটার হবে। ৬০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত সেচ ও নিষ্কাশন ডালা সংলগ্ন উভয় বেডের কিনারা হইতে ৫৮ সেন্টিমিটার 

বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২.৫ মিটার অন্তর অন্তর এক সারীতে মাদা তৈরি করতে হবে। পেটে এক সারিতে ১২ থেকে ১৫ দিন বয়সের চারা লাগাতে হবে। আপনি যখন চারা গুলো লাগাবেন তার আগের দিন আপনি সেই জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখবেন। আর পরের দিন আপনি সকালে অথবা বিকালে সেই জায়গায় চারা রোপন করে দিবেন। মাদার মাটি ভালোভাবে উলটপালট করে নিয়ে এক কোড দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিবেন।

এরপর আপনি পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর বেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলা সহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরে দিতে হবে। এরপর চারা লাগানোর পর উক্ত জায়গায় পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে। আপনি যদি চারা লাগানোর সময় মাদা তৈরি এবং চারা রোপনের এই প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করেন দিয়ে চারা রোপন করেন তাহলে আপনি একটি সুযোগ্য বাগান থেকে ভালো পরিমাণের ফলন পাবেন আশা করা যায়।

মাচা ও বাউনি দেওয়া= আপনি যদি ঝিঙা থেকে কাঙ্খিত ফলন পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ঝিংগা চারার জন্য মাচা তৈরি করতে হবে। আপনি যদি মাথা তৈরি না করেন যদি মাটিতে চাষ করেন তাহলে ঝিঙ্গা একদিক বিবর্ণ হয়ে যায় যার ফলে ফলন ঠিকমতন হয় না এবং ফলে দাগ ধরে যায়। তাই ঝিঙ্গা চাষের জন্য মাচা অথবা বাউনি দেওয়ায় উত্তম পদ্ধতি। কারণ মাচা না দেওয়ার কারণে পচন ধরে এবং প্রকৃতিক পরাগায়ন কম হয় এজন্য ফলন কমে যায়।

হাইব্রিড ঝিঙ্গার জাত

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে অনেক সবজিরই দেশী ও হাইব্রিড জাত রয়েছে এবং এর মধ্যে ঝিঙ্গা হল একটি।দেশি ও হাইব্রিড দুটির মধ্যে পার্থক্য হল একটিতে অনেক তাড়াতাড়ি ফলন দেয় এবং আরেকটি হলো ধীরে ধীরে আসতে বড় হয়ে ফলন দেয়। তবে বর্তমান সময়ে আমরা সবকিছু দিক দিবেন সোনা করে চাহিদা পূরণের জন্য হাইব্রিড জাতি বেছে নেই। কারণ এতে করে খুব অল্প সময়ে অধিক পরিমাণে ফলন পাওয়া যায়। তাই চলুন আপনাদের ঝিঙ্গার হাইব্রিড জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দেই।
আমাদের দেশের হাইব্রিড জাতের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হাইব্রিড জাত হচ্ছে "অসীম"। যার আঞ্চলিক নাম 'অসীম'। অবমুক্তকারী প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম সীড, জীবনকাল ০ দিন। সিরিজ সংখ্যা ঃ উৎপাদ(সেচ সহ)/প্রতি হেক্টর ৩২ থেকে ৩৫ টন কেজি। উৎপাদন(সেচ ছাড়া) প্রতি হেক্টর ০কেজি। অসীম জাতের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী।
  • এটি তীব্র শীত ব্যতীত প্রায় সারা বছর চাষ করা যায়।
  • এই জাতের এবং গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেশি
  • গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং দেখতে আকর্ষণীয় সবুজ
  • এই সবজির বোটার নিচের অংশ পুরু হওয়ার অব্যাহত অংশ নেই বললেই চলে
  • ফলের সাইজ ২৮ থেকে ৩৩ সেন্টিমিটার লম্বা
  • গড়ে প্রতিটি ফলের ওজন ২০০ থেকে ২৩০ গ্রাম পর্যন্ত(হাইব্রিড জাত গুলো ২৫০ থেকে ২৮০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে)
এই জাতের চাষাবাদ পদ্ধতি=
  • বীজ বপণের সময়ঃপোষ ও মাঘ অর্থাৎ(মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি) ব্যতীত প্রায় সারা বছরেই চাষের জন্য উপযুক্ত
  • বিজের হার= প্রতি শতাংশে ১০ থেকে ১২ গ্রাম এবং প্রতি এ করে ১.০ থেকে ১.৪ কেজি, সর্বোচ্চ(১.৫ কেজি) পর্যন্ত।
  • চারা বপন পদ্ধতি= আপনি চাইলে বীজ সরাসরি বেডে রোপণ করতে পারেন। বীজ বপনের পূর্বে ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হবে। এক সারি থেকে আরেক সারি ৫ ফুট থেকে ৬ ফুট এবং চারা থেকে ২ফুট দূরত্বে দুইটি করে বীজ বপন করতে হবে।
  • চারা রোপনের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চারা লাগাতে হবে।
হাইব্রিড ঝিঙ্গার মধ্যে আরেকটি জাত হলো(songkran)। এই জাতের ঝিঙ্গার ফল লম্বাটে এবং সবুজ বর্ণের হয়। এই জাতের ফলের মধ্যে বীজ কম থাকে এবং খাওয়ার জন্য খুবই সুস্বাদু। তাই চলুন এই জাতের ঝিঙ্গার চাষ পদ্ধতি জমি নির্মচন বীজ বপন সার প্রয়োগ ও সেচ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানে।
  • জমি নির্বাচন= হাইব্রিড ঝিঙ্গা(songkran) চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মাটি হলো দোঁআশ মাটি। জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো হতে হবে।
  • বীজ বপন= এই জাতের হাইব্রিড সিঙ্গার বীজ বাজারে সহজলভ্য। বীজ ভবনের জন্য জমিতে ৩০ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার দূরে লাইন তৈরি করে বীজ ভবন করতে হয়। বীজ ভবনের পর হালকা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দিতে হবে।
  • সার প্রয়োগ= উল্লেখিত হাইব্রিড ঝিঙ্গা জাতের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে জৈব সার এবং রাসায়নিক দুটি ব্যবহার করতে পারবেন।
  • সেচ পদ্ধতি= হাইব্রিড ঝিঙ্গা songkran জন্য নিয়মিত সেচের প্রয়োজন হয়। গরমের সময় দিনে দুইবার সকালে এবং বিকেলে ও শীতের সময় দিনে ১ বার সকালে সেচ দিতে হয়।
  • ফসল সংগ্রহ= এই জাতের ঝিঙ্গা বপনের পর থেকে ৪২ থেকে ৪৮ দিন পর ফল সংগ্রহ করা যায়(এর থেকেও বেশি সময় লাগতে পারে)। ফলের রং সবুজ থাকাকালীন অবস্থায় সংগ্রহ করতে হবে
  • উৎপাদন= হাইব্রিড ঝিঙ্গা songkran ঘরে উৎপাদন হয় ২২ থেকে ২৪ টন পর্যন্ত।
উচ্চ ফলনশীল ঝিঙ্গা চাষের আরেকটি হাইব্রিড জাত হচ্ছে "F1" হাইব্রিড ঝিঙ্গা। এই জাতের সমস্ত কিছু বিস্তারিতভাবে আপনাদের জানিয়ে দিব।
  • বীজ ভবনের উক্ত সময়= মধ্য 'মার্চ' থেকে মধ্য 'মে' পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
  • বীজ হার= হেক্টর ২.৫ কেজি থেকে৫ কেজি এবং প্রতি শতাংশ ১০ থেকে ১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
  • জমি নির্বাচন= ঝিঙ্গার যেকোনো জাতের জন্য একই জমে নির্বাচন করতে হবে। যা আমরা একটু আগে উপরে উল্লেখিত করেছি। তারপরও আপনাদের সুবিধার্থে আমরা আরেকবার বলছি, ঝিঙ্গা চাষের ও নিষ্কাশনের উত্তম সুবিধাজাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
  • বেড তৈরি= বেডের উচ্চতা হবে ১২ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার এবং বেডের প্রস্থ হবে ১.৪ মিটার এবং লম্বা জমি দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামতো আপনি করে নিতে পারেন। পরপর পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৫৮ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার দেশের পেজ ও নিষ্কাশন বালা থাকবে এবং ফসল পরিচর্যা সুবিধার্থে প্রতি দুই বেড পর পর ৩০সেন্টিমিটার প্রশস্ত নালা রাখতে হবে।
  • মাদা তৈরি ও চারা রোপণ= বাচ্চার আকার হবে ব্যাস ৪৮ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার এবং গভীর ৫০ সেন্টিমিটার ও তলদেশ ৪৭থেকে ৫০সেন্টিমিটার। ৫৮ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত সেচ ও নিষ্কাশন ওয়ালা সংলগ্ন উভয়ভেটের কিনারা হইতে ৬০ সেন্টিমিটার বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২.৫ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে।
  • প্রতিটি বেডে এক সারিতে ১৫ থেকে ১৭ দিন বয়সের চারা রোপন করতে হবে।
  • ঝিঙ্গা গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়।গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় বলে তখন সবসময় পানি সেচের প্রয়োজন নাও হতে পারে।কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ সময় থেকে মে মাস পর্যন্ত খুব শুষ্ক আবহাওয়া থাকে আর এই সময় অনেক কারণে বৃষ্টি হয় না তাই উক্ত সময়ে ৪থেকে ৫ দিন অন্তর পর নিয়মিত পানি সেচ এর ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
  • মালচিং সেচের পর জমিতে চটা বাধেঁ, আর চটা বাধলে গাছের শিকড় অঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যবহৃত হয়।তাই প্রত্যেক মালচিং সেচের পর হালকা করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে এবং মাটিগুলো আলগা করে দিতে হবে।
আমাদের দেশের আরেকটি হাইব্রিড জাত হচ্ছে হাইব্রিড ঝিঙ্গা "জাগুয়া"। এই জাতের বৈশিষ্ট্য গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
  • এটি একটি উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের চিঙ্গা
  • অতিরিক্ত শীত (উপরে উল্লেখিত) ব্যতীত সারা বছরে চাষ করা যায়
  • এই জাতের ফল আকর্ষণীয় সবুজ বর্ণের কোমল এবং আঁশযুক্ত এবং খেতে খুবই সুস্বাদু
  • এই জাতের ফল প্রায় ২৮ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার(সর্বোচ্চ ৩৫) লম্বা হয়।
  • এই জাতের প্রতিটি ফলের গড়ে ওজন ১৮০ থেকে ২০০ গ্রাম(সর্বোচ্চ ২৫০) গ্রাম হয়ে থাকে
  • পোকামাকড় ও রোগ ও বৃষ্টি সহনশীল জাত এটি
  • অন্য সব প্রচলিত জাতের তুলনায় এই জাতটি প্রায় ২থেকে ২.৫ গুন বেশি পরিমাণ ফলন দিয়ে থাকে।
এতক্ষণ আমরা আপনাদের কয়েকটি জাত ও এর গুণাবলী বৈশিষ্ট্য রোপন পদ্ধতি বিভিন্ন জাতের মাটি নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আমাদের দেশে আরো অনেক ধরনের জাত আছে কিন্তু এগুলো তেমন পরিমাণে চাষ হয় না তারপরও আপনাদের নাম গুলো বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিচ্ছি। জাত গুলোর নাম হচ্ছেঃ-হাইব্রিড ঝিঙ্গা সুপার গ্রিন, হাইব্রিড ঝিঙ্গা  রোম্ব-২২,হাইব্রিজ ঝিঙ্গা রিজ-লং, বারি ঝিঙ্গা-২, হাইব্রিড হিরো ঝিঙ্গা এবং আরো উল্লেখিত অনেকগুলো জাত রয়েছে।

টবে ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি

বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই টবে সবজি চাষ পদ্ধতিরটবে সবজি চাষ পদ্ধতির আগ্রহী হয়ে থাকি। আর এর মধ্যেই ঝিঙ্গা একটি মৌসুমী ফলের জন্য আমরা টবে ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি করতে চাই। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি ও নিয়ম না জানার কারণে আমরা জাস্ট ঠিকই করি কিন্তু সঠিক পরিমাণে ফলন পায় না। তাই আজকে আমরা আপনাদের জানাবো তবে ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি ও সঠিক পরিচর্যা মাটির গুনাগুন ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ-

টবে ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতিতে জন্য সর্বপ্রথম আপনার যেটা সবচাইতে বেশি প্রয়োজন হবে সেটা হল সঠিক বীজ নির্বাচন। এর কারণ আপনি মাটিতে হলে বিভিন্ন জাতের চারা অথবা বীজ রোপন করতে পারবেন কিন্তু টবের জন্য আপনি যদি সম্পূর্ণ ভালো জাত অথবা টবে ভালো ফলন হয় এমন জাতের চারা রোপন করেন তাহলে আপনি অধিক পরিমাণে ফলন পাবেন। তাই আপনাকে সর্বপ্রথম বীজ নির্বাচন করতে হবে ও মাটি তৈরি করতে হবে।

প্রথমে যেটা আপনি করবেন তা হলো বী জেনে আপনি বীজগুলোকে ২থেকে ৩দিন ভিজিয়ে রাখবেন। এরপর দুই থেকে তিন দিন পর সেটিকে ঝুরো উক্ত মাটিতে প্রতিস্থাপন করবেন। এক্ষেত্রে আপনি যে মাটি ব্যবহার করবেন সেই মাটি যেন খুব ঝড়ঝড়ে হয় অর্থাৎ দোআঁশ মাটি। তবে আপনাদের আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলব আপনি চাইলে মাটির সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি কোকোপিট না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি পুরোপুরি ভার্মি কম্পোস্টের উপর যারা তৈরি করবেন।
যারা তৈরি করার পর যাহা গুলো যখন মোটামুটি ভাবে ৮থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হবে অর্থাৎ(প্রতিটি গাছে ৭ থেকে ৮টি করে পাতা গজাবে), সেই চারা গুলোকে আপনি সিঙ্গেল সিঙ্গেল করে টবে রোপন করবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাদের বলে রাখি, টবে ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই একটা টবে একটি গাছ রোপণ করবেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি ৪ ফুট এর বেশী টপ অথবা ড্রামে চারা লাগান সেক্ষেত্রে আপনি ২থেকে৩টি গাছ লাগাতে পারেন(উত্তম ১টি টপে একটি গাছ)।

তবে ঝিঙেরগাছের জন্য মাটি তৈরি= এই গাছের মাটি প্রস্তুত করা অনেক সহজ। মাটি তৈরির জন্য আপনি প্রথমে দুই থেকে তিনভাগ মতো যে কোন জৈব সার যেমনঃ-গোবর সার নিবেন। এর পাশাপাশি নেবেন ৭৫ থেকে ৮৫ ভাগ মাটি আর অল্প কিছু হাড়ের গুঁড়ো ও সর্ষের খোল ও নিম খোল। নিমখোলটা একটু বেশি পরিমাণে দেওয়ার চেষ্টা করবেন এতে করে গাছে পোকামাকড় টা কম হবে এবং গাছের ফাঙ্গাসও লাগে না এবং অনেক ভালো হয়।

উল্লেখিত সার গুলো দিয়ে মাটি প্রস্তুত করবেন এবং সেই মাটিতে গাছ রোপন করবেন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের জন্য পরামর্শ থাকবে মাটির প্রস্তুত করার পরে মোটামুটি ভাবে ১২থেকে ১৫ দিন পর গাছটি প্রতিস্থাপন করার জন্য। এর ফলে সারগুলো বিক্রিয়া হয়ে তৈরি হয়ে যাবে এবং মাটিটা সুষম মাটি এবং খুব সুন্দরভাবে গাছের জন্য প্রস্তুত থাকবে।আপনাদের আরেকটি গোপন টিপস বলে দেই,সেটা হচ্ছে মাটির সাথে আপনি অবশ্যই অল্প পরিমাণ হলেউ কোকোপিট ব্যবহার করবেন।

টবে ঝিঙের ফলন বৃদ্ধির গোপনীয় টিপস

আমরা অনেকেই আছি বীজ অথবা চারা রোপনের পর আমরা ঠিকমতো যত্ন নেই না। যার কারণে আমরা অধিক পরিমাণে ও আশাযোগ্য ফলন পাই না। কিন্তু এখন আমি আপনাদের কিছু গোপনীয় টিপস বলে দিব যেগুলো অবলম্বন করে আপনি ঝিঙ্গার ফলন বৃদ্ধি অধিক পরিমাণে করতে পারবেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের কিছু পরামর্শ দিচ্ছিঃ-
  • আপনার ঝিঙ্গা গাছের বয়স যখন ২৫ থেকে ৩০ দিন হবে তখন আপনি একটি মাচা তৈরি করবেন যাতে গাছের লতাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে যেতে পারে ঠিকমত। সবচাইতে উত্তম হয় আপনি যদি মাজা তৈরি করতে পারেন আর যদি আপনি তা না করতে পারেন তাহলে আপনি জাল অথবা নেট টাঙিয়ে দিতে পারেন।
  • ভেঙে গাছ কিন্তু সূর্যের আলো খুব বেশি পরিমাণ পছন্দ করে, তাই আপনি ভাত বাগানে টবে গাছ এমন জায়গায় রাখবেন যেখানে সূর্যের আলো ডাইরেক্ট গাছে পড়ে।
  • অধিক পরিমাণে ফলন পেতে কৃত্তিম পরাগায়ন করার চেষ্টা করবেন
  • গোপনীয় কথা হলো সেটি হচ্ছে গাছের বয়স যখন (১৫থেকে ১৭ দিন হবে তখন আপনি গাছের ডগা ভেঙ্গে দিবেন){এটা করলে কিহয় আমাকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন পরবর্তী পোস্টে জানিয়ে দিব}
  • আপনার যদি হাত বাগানে জায়গা কম থাকে তাহলে আপনি গাছ বেশি ঝোপালো করবেন না। এক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত গাছের কাটিং করে রাখতে পারেন এতে করে আপনার গাছের ফলন বৃদ্ধি ও ফুল অনেক পরিমাণই আসবে।
  • আপনি যদি কাটুন পদ্ধতি না জানেন তাহলে আমাকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন আমি আপনাদের বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিব।
  • টবে ঝিঙ্গা চারা রোপনের আরেক গোপনীয় টিপস হচ্ছে চারা রোপনের কয়েক দিন পর অতিরিক্ত গ্রীষ্মকালে গাছের গোড়ার মাটি হালকা করে উর্বর করে রাখবেন এবং অল্প পরিমাণে (চারা অর্থাৎ ধান গাছ দিয়ে রাখবেন) এতে করে মাটির গুনাগুলো বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং সার হিসেবে কাজ করবে।

ঝিঙ্গায় সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

আপনারা যারা এতক্ষণ ধরে উপরে উল্লেখিত কথাগুলো সম্পন্ন মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা এতক্ষণে জেনে গেছেন হাইব্রিড ঝিঙ্গার চাষ এবং দেশি ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে এবং কোন সময় ঝিঙ্গা চাষ করা হয় এবং টবে ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি। তাই এখন আমাদের জানতে হবে ঝিঙ্গায় কোন কোন সার প্রয়োজন হবে কোন সারের পরিমাণ কতটুকু এবং কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে টেবিল অনুসারে সম্পূর্ণভাবে বিস্তারিত দেওয়া হলোঃ-

সারের নাম মোট সারের পরিমাণ(একর প্রতি) মোট সারের পরিমাণ(শতাংশ প্রতি) জমি তৈরি সময়(শতাংশ প্রতি) চারা রোপণের ৮-১০ দিন পূর্বে(মাদা প্রতি) চারা রোপণের১২-১৫দিন পর(মাদা প্রতি) চারা রোপণের২৮-৩০দিন পর(মাদা প্রতি) চারা রোপণের৪৮-৫২দিন পর(মাদা প্রতি) চারা রোপণের৭২-৭৫দিন পর(মাদা প্রতি)
পচা গোবর ৭-১০ টন ৭৭-৮০ কেজি ১৮-২০ কেজি ৪-৫ কেজি - - - -
ইউরিয়া ৬৫-৭০ কেজি ৬০০-৭০০গ্রাম - - ১২-১৫ গ্রাম ১৫-২০ গ্রাম ১৫-২০ গ্রাম ১৫-২০ গ্রাম
টিএসপি ৬৮-৭০ কেজি ৬৫০-৭৫০ গ্রাম ৩০০-৩৫০ গ্রাম ২০-৩০ গ্রাম - - - -
এমওপি ৫৫-৬০ কেজি ৫৫০-৬০০ গ্রাম ২০০-২৫০ গ্রাম ২০-২৫ গ্রাম ১২-১৫ গ্রাম - - -
জিপসাম ৩৮-৪০ কেজি ৪০০-৪২০ গ্রাম ৩৫০-৪০০ গ্রাম - - - - -
দস্তা ৪-৫ কেজি ৪৫-৫০ গ্রাম ৪০-৫০ গ্রাম - - - - -
বোরন ৩.৫-৪ কেজি ৪০-৪৫ গ্রাম ৪০-৪৫ গ্রাম - - - - -
ম্যাগ্নেসিয়াম ৪-৫ কেজি ৪৫-৫০ গ্রাম - ৫-৮ গ্রাম - - - -
অক্সাইড - - - - - - - -
সম্পূর্ণ টেবিল(* প্রতি শতাংশে ১২টি মাদা হিসাবে) 

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক  স্যার/ম্যাম, আজকের আর্টিকেলে আলোচনার বিষয় ছিল হাইব্রিড ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি হাইব্রিড ঝিঙ্গার জাত ঝিঙ্গা চাষের উপযুক্ত সময় এবং টবে ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। আশা করি এসব বিষয়ের উপর আলোচনা করা সম্পূর্ণ তথ্য গুলো আপনাদের সত্যের উপর সঠিকভাবে জানাতে পেরেছি। আপনি যদি ঝিঙ্গা চাষে আগ্রহী হন তাহলে উল্লেখিত সব কাজগুলো অনুসরণ করে আপনি ঝিঙ্গা চাষ করতে পারেন। এতে করে অধিক পরিমাণে ফলন পাবেন।

আশা করা যায় আপনাদের সাথে যেসব বিষয়গুলো আলোচনা করলাম এসব অবলম্বন করে আপনি যদি ঝিঙ্গা চাষ করেন তাহলে একটি আশাযোগ্য অধিক পরিমাণে ফলন পেতে পারেন। তাই আপনি যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন অন্যদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করে দেবেন যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। টবে ঝিঙ্গা চাষের জন্য আপনার আরও কিছু বিস্তারিত জানার থাকলে অতি অবশ্যই আমাকে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দেবেন আমি আপনাকে বিস্তারিত ভাবে সব জানিয়ে দেবো

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url