হজ কাদের উপর ফরজ-হজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানুন
হজ শব্দের অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা , সংকল্প করা , কোন পবিত্র স্থান দর্শনের সংকল্প করা। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়,বিশেষ অবস্থায়,নির্দিষ্ট স্থানে,নির্ধারিত নিয়মে,নির্দিষ্ট কতগুলো অনুষ্ঠান পালন করাকে হজ বলে।
হজ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, আল্লাহর উদ্দেশ্য বাইতুল্লাহ শরীফের হজ পালন করা মানুষের উপর অবশ্য কর্তব্য; যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে।(সূরা আলে ইমরান আয়াতঃ৯৭)। হজ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো,কোন অশ্লীল কাজ করল না,পাপ কাজ করলো না সে নবজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে ফিরল(বুখারি ও মুসলিম)
সূচিপত্র-নিচের যে অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন
- হজ কাদের উপর ফরজ
- হজের ফরজ কয়টি ও কি কি
- হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- হজের ওয়াজিব সমূহ কি কি
- হজের সুন্নত সমূহ কি কি
- হজ কি অবিলম্বে ফরজ নাকি ধীরে
- জীবনে কতবার হজ করা ফরজ
- হজ ফরজ হওয়ার শর্তাবলী কি কি
হজ কাদের উপর ফরজ
যেসব লোক বাইতুল্লাহ পর্যন্ত যাতায়াতের দৈহিক ক্ষমতা রাখে এবং হজ্জ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের আবশ্যকীয় ব্যয় বাদে যাতায়াতের খরচ বহন করতে সক্ষম হয় তাদের উপর হজ্জ ফরজ। এক্ষেত্রে মহিলা হাজী হলে একজন পুরুষ সফল সঙ্গে থাকতে হবে এবং সফর সঙ্গীর ব্যয় নির্বাহে সক্ষম হতে হবে। ময়লা হাজির সফর সঙ্গে হবেন স্বামী অথবা এমন আত্মীয় যার সাথে বিবাহ সম্পর্ক হারাম। যেমনঃ-পিতা,ছেলে,ভাই,চাচা,মামা।
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ অবস্থায় নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত নিয়মে নির্দিষ্ট কতগুলো অনুষ্ঠান পালন করাকে হজ বলে। নির্দিষ্ট সময় বলতে বোঝায় ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত সময় কে। বিশেষ অবস্থা বলতে বোঝায় ইহরামের অবস্থাকে। নির্দিষ্ট স্থান বলতে বোঝায় কাবা শরীফ(সাফা-মারওয়াসহ) এবং তার আশেপাশের আরাফাত,মিনা,মুজদালিফা প্রভৃতি স্থানকে।
নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান বলতে বোঝায় ইহরাম, তাওয়া , সাঈ, ওকুফ(অবস্থান) কুরবানী প্রভৃতি হজের নির্ধারিত অনুষ্ঠানগুলোকে বোঝায়। মনে রাখতে হবে সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্ব না করাকে কুরআনে "কুফরি"{ অস্বীকার} বলে আখ্যায়িত করেছে। এই থেকে বোঝা যাচ্ছে হজের গুরুত্ব কতটা। অতএব ,হজের সময় হওয়ার সাথে সাথে দেরি না করে ফরজ হজ আদায় করা জরুরী(ঋণমুক্ত ও সম্পূর্ণ সামর্থ্যবান হলে)।
হজের ফরজ কয়টি ও কি কি
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো হজ্জ। । হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। প্রত্যেক সুস্থ,
প্রাপ্তবয়স্ক , বুদ্ধিমান ও সামর্থ্যবান মুসলিম নর ও নারীর উপর জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ। হজের ফরজ তিনটিঃ১(ইহরাম বাধা),২(আরাফাতে অবস্থান করা),৩(তাওয়াফের জিয়ারত করা) আর এর মধ্যে যেকোনো একটি ফরজ পাঠ করলে হজ্জ সম্পূর্ণ হয় না।
- হজের প্রথম ফরজ হলো ইহরাম বাধা। হজ ও ওমরার নিয়তে পবিত্রতা অর্জনের পরে সেলাই বিহীন কাপড় পরিধান করাকে ইহরাম বলে। মৃতপ্রায় ফকিরের দেশে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হয়। এই সময় রঙিন কাপড় পড়া যাবে না। সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। চুল নক কাটা যাবে না। কোন স্থল প্রাণীর স্বীকার করা যাবে না। এমনকি মশা ,মাছি, উকুন ইত্যাদিও মারা যাবে না। সব ধরনের ঝগড়া, বিবাদ ও পাপকর্ম থেকে বিরত থাকতে।
- ওকুফ বা অবস্থান । হজের দ্বিতীয় ফরজ হলো ৯ই জিলহজ তারিখে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা।
- তাওয়াফে যিয়ারত। হজের তৃতীয় ফরজ হল তাওয়াফে জিয়ারত করা।কুরবানী দিনগুলোতে অর্থাৎ জিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখের মধ্যে কাবা ঘরের তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফের জিয়ারত বলে। এই তিন দিনের যেকোনো দিনে এই তাওয়াফ করা যায়। তবে প্রথম দিনে তাওয়াফ করাই উত্তম। এই তিন দিনের পরে তাওয়াফ করলে(দম) স্বরূপ একটি কুরবানী করতে হবে।
- ইহরাম বাধাঁর সাথে সাথে আরেকটি দোয়া বারবার পড়তে হয় একে বলে তালবিয়াহ। এটি ফরজ না হলেও বলতে হয় তা হলোঃ-লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি মাতা লাকাওয়াল মুলক লা শারিকা লাকা।
হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত।ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হল হজ্জ। প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক,বুদ্ধিমান ও সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর উপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। এরপর সে যতবার হজ করবে তার নফল হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে নফল হজে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। হদ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-আল্লাহর উদ্দেশ্য বাইতুল্লাহ শরীফের হজ পালন করা মানুষের উপর আবশ্যক কর্তব্য; যার সেখানে যাওয়ার সামর্থক রইয়াছে।
আরো পড়ুনঃ কি পরিমান খেদমত করলে স্বামীর হক আদায় হবে
কাবা আল্লাহর ঘর। পৃথিবীর প্রাচীনতম ইবাদত খানা।এটিই আমাদের কেবলা , বিশ্ব মুসলিমদের কেবলা এবং মিলন কেন্দ্র। সুতরাং হজ হচ্ছে বিশ্ব মুসলিমদের মহাসম্মেলন। বিশ্ব মুসলিম যে এক,অখণ্ড উম্মত হজ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। গায়ের রং, মুখের ভাষা, আর জীবন পদ্ধতিতে যত পার্থক্য থাকুক না কেন, এই সম্মেলনে তারা একাকার হয়ে যায়, তাদের সব পার্থক্য দূর হয়ে যায়। সকলের পরনে ইহরামের সাদা কাপড়। সকলের ধর্ম এক,উদ্দেশ্য এক,অন্তর এক আল্লাহর ধ্যান,সকলেই আল্লাহর বান্দা।
সকলেই ভাই ভাই ।এই সবই মুসলিমদের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বও সাম্যের এক অপূর্ব পুলক শিহরণের জায়গা। তাদের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে ওঠে। সবার কন্ঠে একই আওয়াজ থাকে 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক'(হাজির হে আল্লাহ আমরা তোমার দরবারে হাজির)। আজ প্রত্যেক হাজীকে মুসলিম বিশ্বের লাখো মুসলিমদের সাথে পরিচয়ের বিরাট সুযোগ করে দেয়। একটি সফরের বহু সফরের সুফল পাওয়া যায়।
ইসলামের ঐক্য সাম্য ভ্রাতিত্ব ও প্রাণ চাঞ্চল্য বজায় রাখার ব্যাপারে হজের তাৎপর্য অপরিসীম। হজ মানুষের অতীত জীবনের গুনাহ গুলো ধুয়ে মুছে সাফ করে, দেয় মাফ করে দেয়। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;-পানি যেমন ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয় হজ ও তেমনি গুনাহগুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়।(বুখারি শরীফ)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ-যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে হজ করলো, তারপর সে কোন অশ্লীল কাজ করলো না,পাপ কাজ করলো না ,সে যেন নবজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে ফিরল।(বুখারি ও মুসলিম)। হজের প্রধান কাজ গুলো হলো ইহরাম বাধা, কাবাঘর তওয়াফ করা।সাফা- মারওয়ার মাঝে সাঈ করা। আরাফাতের ময়দানে ওকুফ বা অবস্থান করা। মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করা। মিনায় কোরবানি করা ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ রোমানিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি
এক হাদিসে আসিয়াছে যে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত;-নবী করীম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ-হজযাত্রীগণ ও উমরার যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা তার নিকট দোয়া করলে তিনি তাদের দু'আ কবুল এবং তাদের নিকট মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন।[২৮৯২-তাহকীক আল-বানীঃদঈফ]
এক হাদীসে এসেছে যে, আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত; আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মহিলাদের জন্য কি জিহাদ বাধ্যতামূলক? তিনি বলিলেনঃ হাঁ, উপর জিহাদ ফারদ, তবে তাতে অস্ত্র বাজি নাই। আর তা হচ্ছে হজ ও ওমরা[২৯০১-তাহকিক আল বানী-সহিহ হাদিস] এই হাদিস থেকে আমরা একটা জিনিস বুঝতে পারলাম যে মহিলাদের জন্য জিহাদ হল হজ্জ।
হজের ওয়াজিব সমূহ কি কি
হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। হজ প্রত্যেকের জীবনে সামর্থ্য থাকলে একবার করা ফরজ। হজ করতে মূলত হজের ফরজ ওয়াজিব সমূহ ও সুন্নাহ মেনে করতে হয়। এই তিনটি পুরা প্রেক্ষিতে হজ সম্পন্ন হয়। হজের ওয়াজিব সমূহ মোট সাতটিঃ-
- আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামের স্থানে১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা।
- সাফা ও মারওয়া সায়ি করা বা দৌড়ানো।
- রমিয়ে জিমার বা ১০-১১ ও ১২ জিলহজ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা
- তামাত্তু ও কিরন হজে দমে শোকর বা কুরবানী করা।
- মাথার চুল মুড়িয়ে বা কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা
- বিদায়ী তাওয়াফ করা
- মদিনা শরীফ রওজাতুন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিয়ারত করা।(আসান ফিকাহ, দ্বিতীয় খন্ড পৃষ্ঠা ২৫১)
হজের সুন্নত সমূহ কি কি
হজ সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই জানি। হজ একটি ফরজ ইবাদত কিন্তু এই ফরজ ইবাদত গুলোই ওয়াজিব-সুন্নাহ তোরিকায় মেনে করতে হয়। না হলে পরিপূর্ণতা পায়না। তাই আসুন জেনে নেই হজের সুন্নত সমূহ কি কিঃ-
- তাওয়াফে কুদুম বা প্রথম তাওয়াফ করা(ইফরাদ ও কিরান হজ কারীর জন্য)।
- তাওয়াফের সময় রমল করা(প্রথমে তিন চক্কর সৈনিকের মত বীরদর্পে চলা)
- খলিফা অথবা তার প্রতিনিধি তিনদিন স্থানে খুতবার প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া,(সাত জিলহজ কাবা শরীফের হারাম শরীফে),(৯ জিলহজ্জ আরাফার মসজিদে নামিরাতে),(১১ জিলহজ্ব মিনাতে)
- ৮ জিলহজ্ব মক্কা শরীফ থেকে মিনাতে গিয়ে যোহর , আসর , মাগরিব,এশার ও ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা।
- ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া
- অকুফে আরাফা বা আরাফাতে অবস্থানের জন্য সকালে গোসল করা
- ৯ জিলহজ্জ আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা দেওয়া
- ৯-১০-১১-১২ জিলহজ্ব মিলাতে রাত যাপন করা
- মিনা থেকে মক্কা শরীফ প্রত্যাবর্তনের সময় মুহাচ্ছার নামের জায়গায় কিছু সময় অবস্থান করা।
হজ কি অবিলম্বে ফরজ নাকি ধীরে
যে ব্যক্তি হজ আদায়ের সামর্থ্য রাখেন এবং হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তগুলো তার মধ্যে পরিপূর্ণ হয়েছে তার উপর অবিলম্বে হজ আদায় করা ফরজ; এক্ষেত্রে বিলম্ব করা নাজায়েজ। যার উপর হজ ফরজ হয়েছে ও তার পক্ষে হজ আদায় করা সম্ভবপর তার উপর হজ আদায় করার ফরজঃ বিলম্ব করা নাজায়েজ। য়েজ এটি ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালেকের অভিমত।
এর দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী-" মানুষের মধ্যে যার বায়তুল্লাহতে পৌঁছানোর সম্বন্ধে রাখে তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ আদায় করা ফরজ আর এই কথা কেউ অস্বীকার করলে আল্লাহ তো বিশ্বজগত থেকে অমুখাপেক্ষী"(সূরা আল ইমরান আয়াতঃ ৯৭)যেকোনো আমল বা নির্দেশ অবিলম্বে পালনীয়। কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন যে ব্যক্তি হজ আদায় করতে চাই তার সমর্থ্য থাকলে সে যেন দেরি না করে।
অন্য এক হাদীসে আসিয়াছে, ইবনুল আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হজের সংকল্প(ইচ্ছা) করে সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনও অসুস্থ হয়ে যায় কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়।(২৮৮৩-তাহকীক আল্বানী-হাসান হাদীস)।
জীবনে কতবার হজ করা ফরজ
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ একটি। হজ একটি ফরজ ইবাদত। আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন থাকে জীবনে আজ কতবার ফরজ? না জানা থাকলে জেনে নিন হজ কতবার ফরজঃ-ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ-আল-আকরা বিন হাসিব (রাঃ) মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হজ কি প্রতিবছর ,না মাত্র একবার? তিনি উত্তরে বলিলেনঃ বরং একবার মাত্র। অতঃপর এর অধিক করার কারো সামর্থ্য থাকলে নফল হিসাবে গণ্য হইবে।
এক হাদীসে এসেছে যে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত; নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ-যে মহিলা আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত তার জন্য একদিনের পরিমাণ দূরত্বের পথ সফর করা অবৈধ নয়[২৮৯৯-তাহকীক আলবানীঃ সহীহ হাদীস]
এক হাদীসে এসেছে যে, ইবনুল আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত; এক বেদুঈন (নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বলল,অমুক অমুক যুদ্ধে যোগদানের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত হইয়াছে এবং আমার স্ত্রী হজ্জে যাওয়ার সংকল্প(ইচ্ছা) করেছে। তখন নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি ফিরে যাও গিয়ে তার সাথে হজে যাও[২৯০০-তাহকীক আলবানী-সহীহ হাদিস]
হজ ফরজ হওয়ার শর্তাবলী কি কি
অনেক আলেমগণ হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ করেছেন। কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি এই শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় তাহলে তার উপর হজ ফরজ হবে; আজ যদি না পাওয়া যায় তাহলে হজ ফরজ হবে না। এমন শর্তগুলো হল মোট পাঁচটি। সেগুলো হচ্ছেঃ-ইসলাম, আকল(বুদ্ধিমত্তা), বালেগ হওয়া , স্বাধীন হওয়া, সামর্থ্য থাকা। এই পাঁচটি যদি পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় তাহলে তার উপর হজ্ব ফরজ।
১।ইসলামঃ-এটি যেকোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে শর্ত। যেহেতু কাফেরের কোন ইবাদত শুদ্ধ নয়। দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী;" তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া আর কোনো কারণ নেই তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল প্রতি কাফের(আত্মবিশ্বাসী)[ সূরা তওবা-আয়াতঃ ৫৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মুআয(রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠানো সংক্রান্ত হাদিসে এসেছে-", তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ।
তাদেরকে তুমি ' লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এই কালেমাতে সাক্ষ্য দেওয়া এবং আমি যে আল্লাহর রাসূল এই সাক্ষ্য দেওয়ার প্রতি আহ্বান জানাবে। যদি তারা তা মেনে নেয় তখন তাদেরকে জানাবে আল্লাহ তাদের উপর দিবানিশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে জানাবে আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরজ করেছন।। তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে যাকাত আদায় করা হবে এবং গরিবদের মধ্যে তা বিতরণ করে দেওয়া হবে।"{ সহীহ বুখারী-সহীহ মস্লিম}
২/৩।বালেগ হওয়া ও আকলবান(বুদ্ধিমত্তা);-দলিল হচ্ছে এই যে, নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ" তিন শ্রেণীর লোকের উপর থেকে (শরীয়-দায়িত্বের) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে। ১-ঘুমন্ত ব্যক্তি; সজাগ না হওয়া পর্যন্ত,২-শিশু; তার স্বপ্নদোষ না হওয়া পর্যন্ত,৩-পাগল; তার হুঁশ ফিরে আসা পর্যন্ত।"{ সুনানে আবু দাউদ ৪৪০৩}
অতএব শিশুর উপর হজ নেই। অতএব শিশুর অভিভাবক যদি তাকে হজ আদায় করে তাহলে তার হজ শুদ্ধ হবে সে শিশু যেমন সওয়াব পাবে তেমন তার অভিভাবক সুয়াব পাবে। এক হাদীসের বর্ণনায় এসেছে-নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক মহিলা একটি শিশুকে উপরে তুলে ধরে জিজ্ঞাসা করলেন এর জন্য কি হজ আছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃহ্যাঁ। এর প্রতিদান আপনিও পাবেন।[সহীহ মুসলিম]
৪। স্বাধীন হওয়াঃ-অতএব ,ক্রীতদাসের উপর হজ নেই। যেহেতু ক্রীতদাস তার মনিবের অধিকার আদায়ের ব্যস্ত।
৫। সামর্থ্য থাকাঃ-কুরআন মাজিদে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ" করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ; যে লোকেরা সমর্থ্য রয়েছে এই পর্যন্ত পৌঁছাবার।"[ সূরা আল ইমরান-আয়াতঃ৯৭] আয়াতে কারিমাতে উল্লেখিত সামর্থ্য শারীরিক সামর্থ্য ও আর্থিক সামর্থ্য উপায় টাকে অন্তর্ভুক্ত করে। শারীরিক সুস্থতা বলতে বোঝায় শরীর সুস্থ হওয়া ও বাইতুল্লাহ পর্যন্ত সফরের কষ্ট সইতে সক্ষম হওয়া। আর আর্থিক সামর্থ্য বলতে বোঝায় বাতুল্লা হতে আসা যাওয়া করার মত অর্থের মালিক হওয়া।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, স্যার ও ম্যাম, আর কয়েকদিন পরেই ফরজ ইবাদত হজের জন্য অনেকেই সবাই রওনা দিবেন। তাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই জানেনা হজ্জ সম্পর্কে।তাই আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য এবং আপনারাও পড়বেন আপনাদের অনেক কিছু না জেনে থাকলে জেনে যাবেন।আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা হজ্জ সম্পর্কে সত্যের উপর জানতে পেরেছেন। আপনাদের হজ সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে অতি অবশ্যই জানাবেন। আমরা আপনাকে অতিশীঘ্রই জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url